ঠিক কি কারনে SSC কান্ডে সোমা দাসের চাকরি খোয়া গেল না ! দেখে নিন বিস্তারিত এই প্রতিবেদনে

সম্প্রতি SSC নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রায় 25,753 জন শিক্ষকের চাকরি চলে গেছে। কিন্তু সেখানে একটা অবাক করার মতো কান্ড ঘটেছে, সেই কান্ডটি হল শুধুমাত্র একজনের চাকরি এখনো পর্যন্ত বহাল রয়েছে। আর যার চাকরি এখনো পর্যন্ত রয়ে গেছে, তিনি হলেন বীরভূমের নলহাটি থানার বাসিন্দা সোমা দাস।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

মূলত ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করা এই শিক্ষিকার জন্য একমাত্র ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তথা সুপ্রিম কোর্ট। যার ফলে সাধারণত প্রায় সবার মনে প্রশ্ন উঠছে, যে কেন এই শিক্ষার চাকরি এখনো পর্যন্ত রয়ে গেছে ? সেই সমন্বিত প্রশ্নের সমস্ত উত্তর নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি। সুতরাং সম্পূর্ণ বিষয়টি বিস্তারিত জানতে অবশ্যই আমাদের এই প্রতিবেদনটি পড়ে ফেলুন তাড়াতাড়ি।

সবাই অবাক হয়ে গেছে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে :

গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ একদম সোজা জানিয়ে দিয়েছে যে, শুধুমাত্র মানবিক কারণের জন্যই সোমা দাসের চাকরি বাতিল করা হচ্ছে না। কেননা আদালত মেনে নিয়েছে যে, রাজ্যের এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্নরূপে দুর্নীতিযুক্ত থাকলেও সোমা দাসের ক্ষেত্রে সেটা ব্যতিক্রম। কেননা তিনি এক মারন রোগে আক্রান্ত হয়েও সত্ত্বেও এখানে নিজের কাজ চালিয়ে গেছেন।

Read More: অসংখ্য শূন্যপদে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি পদে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি

দেখে নিন সমাদাসের জীবনের লড়াইয়ের গল্প :

সোমা দাস 2016 সালে নবম দশম শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাতে বসেছিলেন এবং সেখানে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু মেধা তালিকা তে নাম থাকা সত্ত্বেও তিনি তখন নিজের চাকরিটা পাননি। তারপরে তিনি শুরু করেন এক বিরাট আইনি লড়াই। তিনি রাজ্য সরকারকে দাবি করেন যেন তার প্রাপ্য চাকরিটা তাকে দেওয়া হয়।

কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ! মাত্র 3 বছরের মধ্যেই অর্থাৎ 2019 সালে ধরা পড়ে তার ক্যান্সার হয়েছে। কিন্তু এই মারণ রোগ সংক্রান্ত খবর পাওয়ার পরেও তিনি তার লড়াই থামান নি। রোদ ঝড় বৃষ্টি ইত্যাদি সমস্ত কিছুকে মাথায় রেখে কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় বিক্ষোভ, মিছিল, আদালতের দরজায় দরজায় ঘোড়া, এই দীর্ঘ লড়াইয়ের সাক্ষী হয়েছিলেন এই লড়াকু বোন সোমা দাস। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি অন্যান্য সকল বঞ্চিত হওয়া প্রাপ্য চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে রাস্তায় ধর্না পর্যন্ত দিয়েছেন।

জীবনের এই দুর্দান্ত লড়াইয়ের গল্প শুনে পাশে দাঁড়িয়েছে আদালত :

সোমা দাসের এই অসহায় অবস্থার কথা আদালতে জানিয়েছিল তার মামলাকারীরা। কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় 2019 সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেছিল সোমাকে চাকরি দিতে। এরপরই 2022 সালে SSC তাকে মথুরা হাইস্কুলে বাংলা শিক্ষিকা পদে নিয়োগ করে দেন।

আদালতের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের সময় মন্তব্য কি :

সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় পেয়ে সমা দাসের কন্ঠে নিম্নচল লক্ষ্য করা গিয়েছে মূলত। তিনি একদিকে যেমন এই খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দিত হয়েছেন, এর পাশাপাশি গভীর সমবেদনাও জানিয়েছেন। তিনি এই নিয়ে বলেছেন যে, আমি কখনোই চাইনি যে আমার চাকরি থাকুক এবং বাকিদের সবার চাকরি চলে যাক। এই রায় আমার কাছে সম্পূর্ণ এক অমীমাংসিত ঘটনা। কারণ গোটা প্যানেলে অনেকের চাকরি যোগ্য ছিল বলে আমরা মনে করি।

কেন অন্যান্য সকলে চাকরি গেল :

সুপ্রিম কোর্ট মনে করেছেন যে, SSC নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি ছড়িয়েছে, যেটা মেনে নেওয়া কোন মতেই সম্ভব নয়। তিন দোষ সমাচার ক্ষেত্রে একমাত্র ঘটনাটি ব্যতিক্রম। তিনি আইনি লড়াই করে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে তার চাকরি কোনো রকম সুপারিশে নয়, বরং তার নিজের যোগ্যতায় তিনি পেয়েছেন। তার ওপর তিনি আবার মারণ রোগ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন যার ফলে আদালত মূলত মানবিক দিক থেকেই উনার চাকরি দেখে বাকিদের সকলের চাকরি করে নিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিঃসন্দেহে এক বিরল ঘটনা হয়ে থেকে যাবে বহু বছর। ধৃত রাজ্যের প্রায় 26 হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা চাকরি এখন বাতিল হয়ে গিয়েছে, যার ফলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সমস্ত ব্যক্তিদের ভবিষ্যৎ কি হবে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ শুরু করতে হবে। তবে সেটা এখন সময়ের অপেক্ষা শুধুমাত্র।

 সমস্ত সরকারি ও প্রাইভেট চাকরি, প্রকল্পের খবর পাওয়ার জন্য আমাদের হোয়াটস্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপে জয়েন হন -

Leave a Comment