sarkari chakri:

শিশু সাথী প্রকল্প : এই প্রকল্পে নাম থাকলে শিশুর হার্ট অপারেশন হবে বিনামূল্যে

পশ্চিমবঙ্গ সরকার নানা সময়ে রাজ্যের জনগণদের সেবার জন্যে বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমুখি প্রকল্প নিয়ে এসেছেন। যার ফলে রাজ্যের প্রতিটা জনগণ বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হয়েছেন। সেরকমই ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার আবারও নিয়ে এসেছে বিশেষ একটি প্রকল্প। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শিশুসাথী প্রকল্প’।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

যে প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের যে সমস্ত শিশুদের হৃদরোগ জনিত সমস্যা রয়েছে এবং অস্ত্রোপচার প্রয়োজন সেই সমস্যা সমাধানের জন্য, মূলত সেই সমস্ত শিশুদের অপারেশন বা অস্ত্র প্রচারের মাধ্যমে সুস্থ করার জন্য এই প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হবে। এই প্রকল্পে নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য কোনো রকম পারিবারিক অর্থনৈতিক দিক দেখা হয়নি। রাজ্যের সমস্ত অর্থাৎ ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের শিশুদের হৃদরোগ জনিত সমস্যার জন্যেই সরকারের কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে যাবে।

রোগ বা অসুখ কোনো ব্যক্তির বয়স বা তার অর্থনৈতিক, পারিবারিক ইত্যাদি অবস্থা দেখে হয় না। যে কোনো বয়সের যে কাউকে যেকোনো রকম রোগে আক্রান্ত হতে পারে যে কোনো সময়। অনেক সময় দেখা গেছে শিশুরা জন্মের পর থেকেই নানা রকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। সদ্যোজাত যে কোনো শিশুর মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম থাকে, কিন্তু তার মাঝেও বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে এই পৃথিবীর মুখ দেখে, যাতে তার জীবনের সংকট আরো বেড়ে যায়।

মূলত সেই সমস্ত দিককে মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবার হৃদরোগে আক্রান্ত সমস্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য এই নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা দেবে। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ এ কথা চিরন্তন সত্য। সেই জন্যেই ভগবানের কাছে আমরা প্রার্থনা করি যে প্রতিটা শিশুই যেন সুস্থ, সবল হবে এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে এবং বেড়ে উঠুক। রাজ্যের সমস্ত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুরা যাতে অচিরেই সুস্থতার মুখ দেখতে পারে, তাদের জন্য এই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সূচনা হয়েছে এই ‘শিশুসাথী প্রকল্পের’। এই প্রকল্পের হাত ধরে সত্যিই শিশু এবং শিশুর পরিবারের সঙ্গে হয়ে উঠতে পেরেছে রাজ্য সরকার। এবার আমরা জানবো এই প্রকল্প সম্বন্ধে আরও বিভিন্ন রকম বিস্তারিত তথ্য আজকের এই প্রতিবেদনে।

কি এই শিশুসাথী প্রকল্প ?

লক্ষাধিক সংখ্যায় নবজাতক শিশু এ পৃথিবীতে নানা রকম শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যে শারীরিক সমস্যাটা শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে এবং এককালীন সেটা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে সেখান থেকে তার বেঁচে যাওয়াটা সত্যিকারের একটা ভাগ্যের বিষয়।

মূলত জন্মগ্রহণ করার সময় অসুস্থ শিশুদের নতুন জীবন দেবার অঙ্গীকার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বানিয়েছে নতুন এই প্রকল্প, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শিশুসাথী প্রকল্প’। এই প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত সমস্ত শিশুর অভিভাবকেরা সরকারি অনুদান পেয়ে থাকবেন তাদের শিশুদের চিকিৎসার জন্যে।

সরকারি তথ্যের সূত্র অনুযায়ী, এই প্রকল্পের অধীনে খরচ হওয়া মোট টাকার 60% দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং বাকি 40% দেয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। তথ্য থেকে দেখা গেছে যে গত 10 বছরে প্রায় 28 হাজার শিশুর চিকিৎসার জন্য অনুদান দেওয়া হয়েছে, যেটা একটি রেকর্ড সৃষ্টি করে দিয়েছে দেশজুড়ে। এরপরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাঞ্জাব। স্বাস্থ্য বিভাগ বেশ কিছু ও বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে জোট বেঁধে PPP Model এ শিশুদের এই সার্জারি পরিচালনা করেছেন।

রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে গড়ে প্রতিবছর প্রায় 3000 শেষে হার্ট সার্জারি করা হয়। এই নতুন শিশু সাথী প্রকল্পকে যদি স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয় তাহলে আগামী দিনের জেলায় জেলায় শিশুদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে যাবার প্রয়োজন পড়বে না বলে মনে করা হচ্ছে।

কবে থেকে শুরু করা হয় এই শিশু সাথী প্রকল্প ?

2013 সালের আগস্ট মাস নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বহৃদয় দিবস উপলক্ষে এই শিশুসাথী প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ওই ঘোষণা সঙ্গে আরও বলেছিলেন যে 12 বছর পর্যন্ত শিশুদের সম্পূর্ণ বিনামূলে হার্টফার্জারির মাধ্যমে তাদের সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।

শিশুসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য শর্তাবলী :

এই প্রকল্পে নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য যে সমস্ত শর্ত মানতে হবে –

1. পশ্চিমবঙ্গের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে শিশু ও তার অভিভাবক কে ।

2. শিশু সহ তার মা এবং বাবার সরকারি শংসাপত্র থাকতে হবে।

3. প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত শিশুর সর্বোচ্চ বয়স হতে হবে 12 বছরের মধ্যে।

শিশুসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যাবে যে সমস্ত হাসপাতালে –

রাজ্য সরকারের এই নতুন শিশু সাথী প্রকল্পের সুবিধা মূলত রাজ্যের সমস্ত বড় বড় শহরগুলির বিখ্যাত সব হাসপাতালে দেওয়া হবে। সেগুলি হল –

1. Kolkata RG Kar Medical Hospital

2. Kolkata BM Birla Hospital

3. Kolkata SSKM Hospital

4. BC Roy Memorial Hospital for Children

5. Kolkata RN Tagore International Institute of Cardiyak Science

6. Durgapur Mission Hospital

7. Kolkata NRS Hospital

শিশুসাথী প্রকল্পে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস্ –

শিশুসাথী প্রকল্পে আবেদন করার জন্য শিশুর অভিভাবকের এবং শিশুর নিজস্ব বেশ কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন। সেগুলি দেখে নিন এক নজরে –

1. শিশুর অভিভাবকের আয়ের প্রমাণপত্র।

2. শিশুর আধার কার্ড কিংবা জন্ম সার্টিফিকেট।

3. শিশুর অভিভাবকের আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড।

4. শিশুর অভিভাবকের স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণপত্র।

5. আবেদনকারীর অভিভাবক যদি BPL শ্রেণীভুক্ত হন, তাহলে তার সার্টিফিকেট।

শিশুসাথী প্রকল্পের সুবিধা গুলি –

শিশুদের হৃদপিন্ডের বিভিন্ন রকম রোগ ব্যাধির সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যাবে এই প্রকল্পের অধীনে। আসুন তাহলে হার্টের কি কি রোগের চিকিৎসা করা হবে এই প্রকল্পের অধীনে সেটা জেনে নিন –

1. বিনামূল্যে নিউরো সার্জারি।

2. হৃদপিন্ডে রক্ত চলাচলের সমস্যা।

3. হৃদ যন্ত্রের বিভিন্ন প্রকার সমস্যা।

4. হৃদপিণ্ডে ফুটো।

5. জন্মগত ছানি সার্জারি।

6. কনজেনিটাল কার্ডিওয়াল ডিফেন্স সঙ্ক্রান্ত সমস্যা।

7. কার্ডিয়াক হার্ট সার্জারি।

8. 12 বছর পর্যন্ত শিশুর হৃৎপিণ্ডের সমস্ত রকম সমস্যার বিনামূল্য চিকিৎসা পাওয়া যাবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।

শিশুসাথী প্রকল্পে আবেদন করার পদ্ধতি –

এই প্রকল্পে আপনি অনলাইন এবং অফলাইন দুই ভাবেই আবেদন জানাতে পারেন। আমরা অনলাইন এবং অফলাইন দুই পদ্ধতিতে কিভাবে আপনারা আবেদন জানাবেন তার বিস্তারিত বিবরণ দিলাম নিচে।

অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন পদ্ধতি – অনলাইনের মাধ্যমে এই শিশুসাথী প্রকল্পে আবেদন করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ শিশুসাথী যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট তে ভিজিট করতে হবে প্রথমে। তারপর সেখানে গিয়ে অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে পূরণ হয়ে গেলে তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমস্ত রকমের স্ক্যান করে আপলোড করে সাবমিট করে দিতে হবে। তাহলে আপনার আবেদনটি সম্পূর্ণ হবে।

অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন পদ্ধতি – অফলাইনে যদি আপনি এই প্রকল্পে আবেদন করতে চান, তাহলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে জেলা স্বাস্থ্য অফিসে। সেখানে গিয়েই শিশুটি প্রকল্পের ফর্ম পেয়ে যাবেন আপনারা। সঠিকভাবে সে ফর্মটাকে পূরণ করে ফর্মটির সঙ্গে সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর জেরক্স কপি যুক্ত করে আবেদন পত্রটি জমা করতে হবে নির্দিষ্ট ঠিকানায়। আরো বিস্তারিত বিবরণ যদি জানতে চান তাহলে অবশ্যই শিশুর সাথে প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।

 সমস্ত সরকারি ও প্রাইভেট চাকরি, প্রকল্পের খবর পাওয়ার জন্য আমাদের হোয়াটস্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপে জয়েন হন -

Leave a Comment